"বঙ্গে
গঙ্গানদীতীরে বিশ্রুতা করুণাময়ী।
বিরাজতে বিশ্বমাতা নমস্তে করুণাময়ী।।
জপাদিসাধ্যা কল্যাণী জবাকুসুমভাসুরা।
অপাপভক্তসুলভা
নমস্তে করুণাময়ী।।...
আজ পয়লা বৈশাখ, প্রতিটা
কালীমন্দিরের মতন বহু ভক্তের
সমাগম ঘটে দক্ষিন কলকাতার
আদিগঙ্গার তীরে মা করুণাময়ীর
মন্দিরে। বঙ্গের
প্রাচীন মন্দিরের মধ্যে অন্যতম এই
মন্দির। পয়লা
বৈশাখের পুণ্যতিথিতে এই মন্দিরেও বহু
ভক্তের ভিড় হয়, মায়ের
কাছে তার পুজো দিতে
আসেন, তাদের একটাই প্রার্থনা-"মা সবাইকে ভালো
রেখো"।
এবার মা করুণাময়ী
কালীমন্দিরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস দেখা যাক। সাবর্ণ
রায় চৌধুরী পরিবারের বংশধরের
তৈরী এই মন্দির ১৭৬০
সালে। সাবর্ণ
গোত্রীয় নন্দদুলাল রায় চৌধুরী তাঁর
কন্যা করুণাময়ীর অকালমৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পড়েন। প্রিয়
কন্যার স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে তিনি
পশ্চিম পুঁটিয়ারীতে মা করুণাময়ী মন্দিরে
দ্বাদশ শিবমন্দির সহ দেবী দক্ষিণাকালীর
এক অপরূপা বালিকামূর্তি প্রতিষ্ঠা
করেন।
মায়ের এই মন্দিরে
বার্ষিক উৎসবগুলির মধ্যে দীপান্বিতা কালীপুজো,
কল্পতরু উৎসব ও নববর্ষ
বিখ্যাত। এই
নববর্ষের দিন হাজার হাজার
ভক্ত ও পূজার্থীর সমাগম
হয়। হালখাতা
পুজো, পুষ্পাঞ্জলি, মায়ের বিশেষ পুজো
হয় এই দিনে।
এই দিন মা করুণাময়ীকে
বিশেষ ভাবে সাজানো হয়। অন্নভোগেও
থাকে বিশেষ বিশেষত্ব।
সবমিলিয়ে এই পুণ্যতিথিতে বহু
দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে
আসেন মায়ের মন্দিরে, বছরের
শুরুতে মায়ের আশীর্বাদ নিতে।
পশ্চিম বাংলার অধিকাংশ
দেব-দেবীর মন্দির গঙ্গার
পূর্ব পাড়েই নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু
সাবর্ণ পরিবারের স্বপ্নাদিষ্ট এই করুণাময়ী কালী
মন্দিরটি গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত। কথায়
আছে," গঙ্গার পশ্চিমকূল, তথা
বারাণসী সমতুল।" তাই
করুণাময়ী কালীমন্দিরের এক বিশেষ তাৎপর্য
আছে।
মাতৃমূর্তি এখানে ভীষণাকৃতি নয়। সৌম্য
মূর্তি- যেন সদা হাস্যময়ী
সপ্তবর্ষীয়া বালিকা মূর্তি।
ধন্য সেই মাতৃমূর্তি-শিল্পী। বর্তমানে
মন্দিরগুলিকে আবার অতীতের ন্যায়
পোড়ামাটির ভাস্কর্যে অলঙ্কৃত করার প্রচেষ্টা চলছে। এই
সমস্ত কিছুই সম্ভব হচ্ছে
সাবর্ণ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক,
নন্দদুলাল রায় চৌধুরীর অন্যতম
সুযোগ্য উত্তরসূরি, মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত, শ্রী অশোক রায় চৌধুরীর নিদারুণ
ঐকান্তিক চেষ্টা ও পরিশ্রমে।
কীভাবে
যাবেনঃ টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশন থেকে
নেমে অটো করে বলবেন
"মা করুণাময়ী কালীমন্দির" যাবেন।
ঠিকানাঃ
শ্রীশ্রী করুণাময়ী ঠাকুরানী ট্রাস্ট
(শ্রী
অশোক রায় চৌধুরী)
৩২, মহাত্মা গান্ধী রোড, টালিগঞ্জ
কলকাতা-
৭০০০৮২
তথ্যসূত্রঃ
১. কালীরূপের তাৎপর্য- শ্রী প্রদীপ রায়
চৌধুরী
২.
"Bara Bari"- Sri Probal Roy Choudhury
সংগ্রহেঃ
শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী
No comments:
Post a Comment