Wednesday, April 24, 2019

 কালনার ঐতিহ্যপূর্ণ এই ১০৮ শিবমন্দির


ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ 

 আজ আলোচনায় ১০৮শিবমন্দিরের ইতিহাস অম্বিকা কালনার ঐতিহ্যপূর্ণ এই শিবমন্দির

 প্রতাপেশ্বর শিবমন্দির প্রতিষ্ঠার প্রায় চল্লিশ বছর আগে এই ১০৮ শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রতিষ্ঠাকাল ১৮০৯ খৃষ্টাব্দ বর্ধমান মহারাজা তেজচাঁদ বাহাদুর এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন বর্ধমানেও মহারাজা এই রকম এক শিবমন্দির তৈরি করেছিলেন বর্ধমানের ১০৮ শিবমন্দির চতুষ্কোণ আর কালনার শিবমন্দির সম্পূর্ণ গোলাকার এই মন্দিরের নাম 'নবকৈলাস'মন্দির প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় বর্ধমান মহারাজাদের এখানে সুন্দর দ্বিতীয় কাশীধাম তৈরির পরিকল্পনা ছিল মনে হয় তাঁদের গুরুদেবের নির্দেশে তাঁরা পরিকল্পনা ত্যাগ করেন এখানেই তাঁরা তৈরি করেছিলেন "শ্যামকুণ্ড" "রাধাকুণ্ড" শ্যামকুণ্ডের বিশাল পুকুর এখনও ঠিক লালজী মন্দিরের পশ্চিমে আছে রাধাকুণ্ড তৈরি হয়েছিল কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরের সামনে কিন্তু ঐখানে লালজী মন্দির এবং সামনে শিবমন্দিরগুলির ক্ষতির আশঙ্কায় রাধাকুণ্ড আবার ভরাট করা হয় পরিবর্তে এখন যেখানে মহিষমর্দিনী স্কুল তার দক্ষিণ দিকে "রাধাকুণ্ড" খনন করা হয় মনে করা যেতে পারে চৈতন্য পরবর্তী কালনার বৈষ্ণব আন্দোলন যথেষ্ঠ স্তিমিত হয়ে আসে বর্ধমান মহারাজাদের সময় সেই হিন্দুধর্মকে আবার নতুনভাবে অনুপ্রেরণা দেবার জন্যই এই সকল মন্দির তৈরির প্রচেষ্টা

 ১০৮ শিবমন্দিরে দুটি বৃত্ত আছে প্রথম বৃত্তে ৭৪টি সাদা এবং কালো শিবলিঙ্গ ক্রমান্বয়ে সাজানো আছে দ্বিতীয় বৃত্তে আছে ৩৪টি সাদা শিবলিঙ্গ কেন্দ্রস্থলে এক বিশাল কূপ একেবারে উঁচু থেকে ছবি তুললে মনে হবে একটা ফুটন্ত পদ্মফুল অনেকের মনে প্রশ্ন আসে এই ১০৮ সংখ্যাটা কেন??? অন্য কোন সংখ্যা দিয়েও করা যেতে পারতো?? অনেক দর্শনার্থীর মনে এই প্রশ্ন থেকে গিয়েছে ১০৮ সংখ্যাটা হল সিদ্ধ বীজ মন্ত্রের প্রতীক ১০৮ বীজ মন্ত্র জপ করলে সকল বাসনা পূরণ হয় শাস্ত্রে কিছু সংখ্যা আছে যার অন্য ব্যাখ্যাও পাওয়া যায় আমাদের শাস্ত্র "সাত" সংখ্যাটার বিশেষ গুরুত্ব আছে প্রথমেই দেখা যায় সাত দিন, সাতে সমুদ্র তারপর জানা যায় সপ্তর্ষি, সপ্তদীপ, সপ্তরত্ন এমন অনেক কিছু তেমনি ১০৮ বীজমন্ত্র এক গুহ্যসাধনার প্রথম অঙ্গ এখানে কালো এবং সাদা শিবলিঙ্গ "পুরুষ" এবং "প্রকৃতির" প্রতীক প্রকৃতির মিলনেই সৃষ্টির আনন্দ সাধনার গুহ্যতত্বে শৈবসাধনা, বৌদ্ধসাধনা এবং তন্ত্রসাধনায় পুরুষ এবং প্রকৃতির একাত্মসাধনার বিশেষ উল্লেখ আছে তন্ত্রসাধনায় ভৈরবীর প্রসঙ্গ পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব পর্যন্ত অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে গেছেন

 যাই হোক মহারাজা তেজচন্দ্র বাহাদুরের সাত মহিষীর মধ্যে একমাত্র নানকীরাণীর গর্ভে এক পুত্র সন্তান হয় নাম প্রতাপচাঁদ প্রতাপচাঁদের জন্ম ১৭৯২ সালে, কিন্তু এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল ১৮০৯ সালে মনে হতে পারে পুত্রকামনা সিদ্ধির জন্যই মহারাজা তেজচাঁদ এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন অবশ্য অন্য কারণও হতে পারে বর্তমান রাজপুরোহিত শ্রীকানাই রায় মহাশয় বলেন এই শিবমন্দিরগুলি সম্পর্কে- শিবলিঙ্গের গৌরীপট্টগুলি সবই নির্দিষ্ট উত্তর দিকে মুখ করা বৃত্তটি পরিক্রমা করার সঙ্গে সঙ্গৈ গৌরীপট্টের মুখও ঘুরে গিয়েছে কন্যাদের বিবাহের পর তাদের দুটো মানসিকসত্তা কাজ করে একদিকে স্বামীর ঘরকে নিজের ঘর বলে মনে করে কাজ করা নিজের মমতায় সাজিয়ে তোলা আবার পিতৃগৃহের দিকেও মন সর্বদা উতলা থাকে সেখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে তার জন্যও ব্যাকুলতা গৌরীর পিতৃগৃহ কৈলাস, অর্থাৎ উত্তরদিকে সেই কারণে উত্তরদিকেই গৌরীর দৃষ্টি অদ্ভূত জ্যামিতিক আকারে সাজানো এই শিবলিঙ্গগুলি দ্বিতীয় বৃত্তের ৩৪টি শিবলিঙ্গ সবই সাদা পাথরের অর্থাৎ সবই প্রকৃতি এই ১০৮ শিবলিঙ্গের মাঝে একটা কূপ অর্থাৎ সবই জল থেকে সৃষ্টি সৃষ্টির প্রথম ঊষাকালে ছিল সবই জল তারপরই আস্তে আস্তে প্রাণের সৃষ্টি তারপরই সৃষ্টির আনন্দ এই থেকে পৃথিবী ১০৮ বীজমন্ত্রও তাই প্রাণের প্রতীক এই বীজমন্ত্রই আত্মাকে দেয় ১০৮ পদ্ম পাঁপড়ির মত আনন্দময় জীবন যে জীবন, এই পৃথিবীর দুঃখ কষ্টের অতীত এক পূর্ণাঙ্গ জীবন


 কালনার ঐতিহ্যপূর্ণ এই ১০৮ শিবমন্দিরের সংক্ষিপ ইতিহাস রচনা করে বনেদীয়ানা পরিবার ধন্য ইতিহাস ঐতিহ্যপূর্ণ এই শিবমন্দিরের ইতিহাস তুলে ধরা হল ইতিহাসপর্বে


তথ্যসূত্রঃ শ্রীমান্ সূর্যশেখর রায় চৌধুরী
চিত্রঋণঃ শ্রীমান্ সূর্যশেখর রায় চৌধুরী




No comments:

Post a Comment