ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ
আবারও শ্রীমতী দেবযানী
বসু মহাশয়ার বাসন্তীপর্বে আমরা তুলে ধরলাম
বনেদীয়ানা পরিবারে এক অনন্য পুজোর
ইতিহাস।আজ তুলে ধরলাম "বনেদী বাড়ির বাসন্তী পূজার" দ্বিতীয়পর্ব।
লিখলেন দেবযানী বসু- ননীলাল ঘোষের
বাড়ির পুজো।
এবার দক্ষিণ কলকাতা
শহরতলি ছেড়ে চলে আসব
খোদ উত্তর কলকাতার পুরোনো
অঞ্চল কাঁসারিপাড়াতে। ২৮নং
তারক প্রামাণিক রোডের ননীলাল ঘোষের
বাড়ির বাসন্তী পুজোর অনুষ্ঠান চলে
আসছে ১০০বছরেরও বেশি সময় ধরে। আশেপাশের
ঘিঞ্জি বাড়ির চাপে এ
বাড়ির প্রবেশপথ প্রায় চোখেই পড়ে
না। সরু
গলির শেষ প্রান্তে বসতবাড়ির
নীচের তলায় দালানে উঁচু
বেদির ওপর সপরিবার মা
দুর্গার অবস্থান। ননীলাল
ঘোষ যখন পুজো শুরু
করেন তখন এ বাড়ি
ছিল না। দালান
তো ছিলই না।
অপ্রত্যাশিত ভাবে বাসন্তীপুজোর সূচনা
হয় এ বাড়িতে।
ননীলাল ঘোষের বন্ধু নুটুবিহারী
মুখোপাধ্যায় একদিন গল্প করতে
করতে বলেন যে, কুমোরটুলিতে
দেখে এলাম মায়ের মূর্তি
অনাদরে পড়ে আছে।
হয়তো কেউ বায়না করেছিল,
কিন্তু নিয়ে যায়নি।
ননীলাল ঘোষ তখন সমাদরে
সেই মূর্তি নিয়ে আসেন। বাড়ির
পাশে খোলা মাঠে হোগলার
চালা করে পুজো শুরু
হয়। ক্রমে
বসতবাড়ি, ঠাকুরদালান সবই তৈরি হয়। ননীলালের
পর তাঁর বড় মেয়ের
বড় ছেলে সিদ্ধেশ্বর ঘোষ
পুজোটির ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন।
তাঁর দুই ছেলে অনিলকুমার
ও দুর্গাচরণের সময় পুজোটি আরও
ফুলে-ফেঁপে ওঠে।
ননীলাল ঘোষের পরথেকে ৪প্রজন্মের
সদস্যরা পুজো করে আসছেন।
কুমোরটুলিতে নিয়ম করে দোলপূর্ণিমার
দিন বায়না করা হয়। চতুর্থী
বা পঞ্চমীতে ঠাকুর আসেন।
এরপর যথাবিহিত নিয়ম অনুযায়ী পুজো
চলতে থাকে।
ষষ্ঠীর আমন্ত্রণ ও
অধিবাস, সপ্তমীর সকালে কলাবউ স্নান
করানো হয়। অষ্টমীর
সন্ধ্যাকালে চাঁচর এখানকার বিশেষ
অনুষ্ঠান। ঐ
সময় বাড়ির গৃহদেবতা নারায়ণকে
আবির দেওয়া হয়।
বাড়ির সকলে আবির খেলেন। বৃহৎনন্দীকেশ্বর
পুরাণ মতে পুজো হয়। একই
দালানে পাশাপাশি মহাশক্তি বাসন্তী দুর্গা ও নারায়ণ
শিলার অবস্থান। অষ্টমীর
সকালে কুমারিপূজা হয়। সন্ধিক্ষণে
সন্ধিপূজা, হোম হয় নবমীর
দিনে। এ
বাড়িতে অন্নভোগ হয় না, লুচিভোগই
দেওয়া হয় দেবীকে।
দশমীর সকালে গঙ্গায় বিসর্জন
হয়। আগে
বেহারার কাঁধে করে নিয়ে
যাওয়া হত প্রতিমা এখন
গাড়িতেই কৈলাসযাত্রা করেন দেবী বাসন্তীদুর্গা।
তথ্যসূত্র
এবং চিত্রঃ শ্রীমতী দেবযানী
বসু
কলকাতার
দুর্গাপূজা- বনেদী থেকে বারোয়ারী
No comments:
Post a Comment