Saturday, April 13, 2019

আদি কংসবণিক দুর্গাবাড়ি


ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ 
আজ প্রকাশিত হল প্রায় ৩৫০বছরের পুরোনো মালদার আদি কংসবণিক দুর্গাবাড়ির পুজোর ইতিহাস "বনেদীর-বনেদীয়ানা" পরিবারের এখানেই সাফল্য পরিবারের সদস্য শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী লিপিবদ্ধ করলেন সেই ৩৫০ বছরের পুজোর  ইতিহাস
আজ থেকে প্রায় কয়েক শতাব্দীর আগের কথাই উঠে আসবে আজ কথিত আছে, মহানন্দার নিমতলি ঘাটে ভেসে আসে এক পাথরচক্র স্বপ্নাদেশে জনৈকা বৃদ্ধা তা লাভ করেন এবং নিজগৃহে দেবী চণ্ডীজ্ঞানে তাঁর পূজা শুরু করেন অবিশ্বাস্য মনে হলেও, এই বিশ্বাসেই যুগ যুগ ধরে মাতৃবন্দনায় বিশ্বাসী কিছু পরিবার


 ইতিহাস বলে আনুমানিক ১৭৭১ সাল নাগাদ মহানন্দার তীরে অর্থাৎ বর্তমান শহরের কুতুবপুর এলাকায় বসতি স্থাপন করেন কংসবণিক সম্প্রদায় পুরাকাল থেকেই সেখানে আরাধনা করা হয় যোগাদ্যা নামে এক দেবীর তার কিছুকাল পরেই আশ্বর্য পাথরচক্রটি পাওয়া গিয়েছিল, যা দেবী চণ্ডীজ্ঞানে পুজো করা হত পরবর্তীকালে সেই পুজোর দ্বায়িত্বভার নেন পুরাতন মালদার তৎকালীন জমিদার গিরিজাবাবু এবং সাড়ম্বরে দুর্গাপুজো শুরু করেন তিনি মালদাতেই

 এই গিরিজাবাবু শেষ বয়সে পাথরচক্রটি দুর্গাপুজোর দ্বায়ভার তুলে দেন কংসবণিক সম্প্রদায়ের হাতে তখন সময়টা আনুমানিক ১২৩৫ বঙ্গাব্দ তখনও দুর্গাবাড়ি পুজো মণ্ডপটি নির্মিত হয়নি আজকের মন্দিরে প্রবেশদ্বারের বামদিকে ঘটা করে নিয়মনিষ্ঠার সাথে দেবী আরাধনা চলত ১২৭৫ বঙ্গাব্দের ৯ই বৈশাখ, ইংরাজির ১৮৬৮ সালে, কংসবণিক সম্প্রদায়ভুক্ত স্বর্গীয় কমললোচন দত্ত, স্বর্গীয় জগমোহন দত্ত, স্বর্গীয় লক্ষ্মীকান্ত দত্ত এবং স্বর্গীয় মাধবচন্দ্রের দান করা জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের দুর্গাবাড়ি, যার নাম "আদি কংসবণিক দুর্গাবাড়ি"
 ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে গোড়িয়া ইটে নির্মিত এই দুর্গামণ্ডপটি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবু পুরোনো ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে একই আদলে মন্দিরটি পুণর্নির্মাণ করা হয় এবং আজও সেই রূপ ধরে রাখতে সময়মতন মন্দিরের সংস্কার করা হয় ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরকে ঘিরেই শহরের গুরুত্বপূর্ন এলাকা দুর্গাবাড়ি মোড়ের নামকরণ


 যুগ যুগ ধরেই পুর্বপুরুষদের অনুসরন করে, সেই একই পরম্পরায় প্রতিবছরই মায়ের আরাধনায় মেতে ওঠে আদি কংসবণিক সম্প্রদায়ের পরিবারগুলি আজও পুরোন রীতি অনুযায়ী পুজোর ঘটভরা, পুষ্পাঞ্জলি, সন্ধিপুজো, সন্ধ্যারতি, বিসর্জন সমস্ত নিয়মে হয়, ধারাবাহিকতা আজও নিষ্ঠার সাথেই বর্তমান


 বহু ভক্তের সমাগম হয়, দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে এই পুজোর ঐতিহ্যের সাক্ষী থাকতে ১৪২৫ বঙ্গাব্দ মানে ২০১৮ সালে ১৫০ বৎসরপূর্তিতে মালদার অন্যতম প্রাচীন দৈবিক প্রতিষ্ঠান আদি কংসবণিক দুর্গাবাড়ি প্রায় তিন শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো আজ মালদা জেলার গৌরব আদি কংসবণিক দুর্গাবাড়ির ঐতিহ্য এবং পরম্পরা আজও বর্তমান
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ পরিবারের সদস্যরা( আদি কংসবণিক দুর্গাবাড়ি)
তথ্যসংগ্রহেঃ শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী


No comments:

Post a Comment