Wednesday, April 10, 2019

রামেশ্বর শিব মন্দির- Rameswar Shiv Temple


ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ 
 আজ এক অন্য ধরনের ইতিহাসের খোঁজে পরিবারের সদস্যবৃন্দ শ্রীমান্ অমিত দে, শ্রীমান্ সুরজিৎ সাহা, শ্রীমান্ মৃন্ময় চক্রবর্তী এবং শ্রীমতী অহনা দে আজ বনেদীয়ানায় উত্তর কলকাতার এক প্রাচীনত্ব স্থান, যা নন্দরাম সেন স্ট্রিট নামে পরিচিত, সেই গলিতেই এক প্রাচীন মন্দির যা "রামেশ্বর শিব মন্দির" বলে পরিচিত, তারই ইতিহাসের সন্ধানে আজ বনেদীর সদস্যরা

 রামেশ্বর মন্দিরের প্রতিষ্ঠার সাল আনুমানিক ১৭০২ খ্রিঃ থেকে ১৭০৫ খ্রিঃ এর মধ্যে কিন্তু মন্দিরের এক প্রাচীন ফলক দেখে জানতে পারা যায় যে, উপরিউক্ত সালের ইংরাজি পরিবর্তন করলে দেখা যায় ১৬৫৫ খ্রিঃ, তা সত্ত্বেও এই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে যে এই মন্দিরের যিনি প্রতিষ্ঠাতা শ্রী নন্দরাম সেন তিনি ছিলেন প্রথম ডেপুটি কালেক্টর, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শ্রী নন্দরাম সেন প্রথম বাঙালি যিনি ৩২থেকে ৩৩ বৎসর বয়সের মধ্যে প্রথম সম্মানীয় ডেপুটি কালেক্টর পদ লাভ করেছিলেন এই সম্মানীয় পদটি লাভ করার পর তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি যথেষ্ঠ পরিমানে বৃদ্ধি পায় তারপরে তিনি এই রামেশ্বর শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এই মন্দিরের শিবলিঙ্গটির বিশেষত্ব হল, এই শিবলিঙ্গটি অভয়ক মন্দিরের শিবলিঙ্গটি সম্পূর্ণরূপে কষ্টিপাথরে নির্মিত প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন এই শিবলিঙ্গ শুধুমাত্র এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নয়, কলকাতার সমগ্র অংশের মানুষই বিশ্বাস করেন যে, উত্তর কলকাতার এই প্রাচীন রামেশ্বর মন্দিরের মহাদেব সমস্ত মানুষের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন

 মহাশিবরাত্রির পুণ্যতিথিতে সারারাত্রি ব্যাপী রামেশ্বর মহাদেব পূজিত হন চারপ্রহরে শৈবতন্ত্রের মতে এছাড়াও এই মন্দিরে নীলউৎসবও পালিত হয়, যেই উৎসবে বহু মানুষের সমাগম ঘটে এছাড়া রামেশ্বরের শিব মন্দিরে এই দুই উৎসব ছাড়াও দুর্গাপুজো, কালীপুজো, অন্নপূর্ণা পুজো, জন্মাষ্টমীর পুজো, দোলউৎসব ইত্যাদি মহাসমারহে অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু শিবের উৎসব বলে মৌলিকভাবে নীলউৎসব শিবরাত্রি ছাড়াও দুর্গাষ্টমীর মহাসন্ধিক্ষণে রামেশ্বরকে অর্ধনারীশ্বর রূপে সজ্জিত তাঁর আরাধনা করা হয়
 রামেশ্বর মন্দিরে সাড়ম্বরে রথযাত্রা উৎসবও পালিত হয় একমাত্র দেবী অন্নপূর্ণার পূজার দিন রামেশ্বর মন্দিরের মহাদেবকে অন্নভোগ নিবেদন করা হয় উক্তদিনে মহাদেবকে সাদাভাত, ডাল, পাঁচ রকমের ভাজা, বিভিন্ন প্রকারের তরকারি, পায়েস ইত্যাদি প্রদান করা হয় এছাড়া নিত্যসেবায় মহাদেবকে পায়েস প্রদান করা হয়
 এই মন্দিরে মহাদেবের সাথে তিনদেবী অর্থাৎ দুর্গা, কালী অন্নপূর্ণা বিগ্রহও প্রতিষ্ঠিত আছেন, তাঁদের নিত্যভোগে- সাদাভাত, ডাল, পাঁচ রকমের ভাজা, তরকারি, পায়েস ইত্যাদি নিবেদন করা হয় এই দেবীদের সাথে মন্দিরে রাধামাধব গোপাল বিগ্রহও পূজিত হন


 উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যপূর্ণ এই রামেশ্বর মন্দিরটি হল শ্রী নন্দরাম সেন-এর দেবত্তর সম্পত্তি কিন্তু দীর্ঘ তিরিশ বছর সঠিক পরিচালনার অভাবে মন্দিরটি দখল হলে গিয়েছিল ২০১১ সালের গুরুপূর্ণিমা তিথিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে চুক্তি করে কোর্টের অনুমতি গ্রহণ করে "মানববিকাশ ট্রাস্ট"-নামক এক চ্যারিটিবেল রিলিজিয়াস ট্রাস্টকে হস্তান্তরিত করা হয়
 রামেশ্বর মন্দিরের মহাদেবের দ্বার উন্মুক্ত করা হয় সকাল ৬টায় এবং নিত্যভোগ দেওয়া হয় দুপুর ১টার সময় রাত্রিবেলায় ৯টায় মন্দির বন্ধ করা হয়-এই নিত্যদিনের মন্দিরের দর্শনের সময়সূচী
 ব্রিটিশ সময়কালের ইতিহাসপর্বে কলকাতাকে "মার্টিন মান্ সিটি"-নামে অবিহিত করা হত, কারণ ১৭৮০ থেকে ১৮৪০ সালের মধ্যে নির্মিত যে সমস্ত বিভিন্ন প্রিকলোনিকাল আকৃতি এই মন্দিরটিতে লক্ষ্য করা যায়, যার দ্বারা প্রমানিত হয় এই মন্দির উত্তর কলকাতার প্রাচীনতম মন্দিরগুলির অন্যতম মহাদেব এই অঞ্চলে ত্রিভূজাকৃতিরূপে বিরাজমান প্রথমে আহিরিটোলা নিমতলা নামক দুইস্থানের মধ্যবর্তী অঞ্চলে মহাদেব ' দুর্গেশ্বর ' নামে বিরাজমান তারপর শোভাবাজার অঞ্চলের নন্দরাম সেন স্ট্রিট নামক স্থানে মহাদেব 'রামেশ্বর' নামে বিরাজমান এবং কুমোরটুলি অঞ্চলের মহাদেব 'নন্দীশ্বর' নামে বিরাজমান তাছাড়া এই অঞ্চলটি পূর্বে শ্মশানভূমি ছিল, তখন গঙ্গাবক্ষ এই মন্দিরের নিকটে অবস্থিত ছিল সেই সময়ে চারচালা, একচালা, দোচালা ইত্যাদি নানান ধরনের স্থাপত্যে দেখা যেত সেই ধরনের স্থাপত্য এই মন্দিরে বিরাজমান ১৮০০ শতাব্দীর দিকে এই মন্দিরটি 'প্রিকলোনিকাল' আকৃতির মন্দিরগুলির মধে অন্যতম ঐতিহ্যপূর্ণ-ঐতিহাসিক মন্দির



 তাই "বনেদীর-বনেদীয়ানা" পরিবারের পক্ষথেকে এই মন্দিরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সংগ্রহ করে আনা হল, ভবিষ্যৎএ আরও ইতিহাসের সন্ধানে থাকবে পরিবারের সদস্যরা
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ শ্রী তাপস দত্ত মহাশয়
তথ্যসূত্র সংগ্রহেঃ শ্রীমান্ অমিত দে, শ্রীমান্ মৃণ্ময় চক্রবর্তী, শ্রীমতী অহনা দে এবং শ্রীমান্ সুরজিৎ সাহা
চিত্রঋণঃ শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী





No comments:

Post a Comment