ঐতিহ্যের
ইতিহাসপর্বঃ
আজ বনেদীয়ানায় প্রকাশিত
হল উত্তর কলকাতার প্রাচীন
অঞ্চলের শিবমন্দিরের ইতিহাস। অঞ্চলটি
বর্তমানে "দর্জিপাড়া" নামে পরিচিত, সেই
অঞ্চলে একটি প্রাচীন শিবমন্দির
রয়েছে। কথিত
আছে সাধারণ মানুষের কাছে
এই প্রাচীন শিবমন্দিরটি "জোড়া শিবমন্দির" নামেই
পরিচিত। আজ
সেই জোড়া শিবমন্দিরের ইতিহাসই
তুলে ধরা হল ইতিহাসপর্বের
এই অধ্যায়ে। তথ্যসংগ্রহ
করলেন সদস্য শ্রীমান্ অমিত
দে এবং শ্রীমতী অহনা
দে।
উত্তর কলকাতার এই
দর্জিপাড়া নিবাসী সুব্রত শেঠ
মহাশয়, তিনি এই মন্দিরের
ইতিহাসের উপাদান প্রদান করে
সাহায্য করেন সদস্যবৃন্দদের।
জোড়া শিবমন্দির প্রতিষ্ঠিত হলেছিল ১১৪০ বঙ্গাব্দে,
যা বর্তমান সময়ে দাঁড়ায় প্রায়
২৮৫ বছরের প্রাচীন।
এই দুই শিবমন্দিরের পাশাপাশি
অবস্থানের কারণে এই মন্দিরকে
জোড়া শিবমন্দির নামে পরিচিত করা
হয়। সাতকড়ি
শেঠ ছিলেন ঐশ্বর্যশালী ব্যক্তি,
তিনিই এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁদের
পরিবার শৈবধারায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণেই সাতকড়ি
শেঠ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
জোড়া শিবমন্দিরে নিত্য
পূজার্চনা ছাড়াও মহাশিবরাত্রি, নীলপুজো,
শ্রাবণ মাসের সোমবার শিবের
বিশেষ পূজা মহাসমারহে এবং
সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। শ্রাবণ
মাসের শেষ সোমবার মহাদেবকে
বিশেষ ভোগ নিবেদন করা
হয়। ভোগে
থাকে সাদাভাত,পোলাও, খিঁচুড়ি, ডাল,
পাঁচ রকমের ভাজা, নানান
রকমের তরকারি, পায়েস ইত্যাদি।
আগে এই দর্জিপাড়া অঞ্চল
জঙ্গলাকীর্ণ ছিল এবং এই
অঞ্চলেই শিবমন্দির অবস্থিত ছিল।
সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয়
হল বিখ্যাত সাহিত্যিক ঈঁশ্বর চন্দ্র গুপ্ত'র নিজেস্ব নিবাস
এই মন্দির সংলগ্ন এলাকায়
অবস্থিত ছিল। তাঁর
সময়ে শ্রীশ্রীমা সারদা এবং স্বামী
বিবেকানন্দ এই মন্দিরে এসেছিলেন। মন্দিরের
দেওয়ালে এখানও প্রাচীন সই
নকশা দেখা যায়।
সাতকড়ি শেঠ এই মন্দিরের
সম্পত্তি দেবোত্তর করে গিয়েছিলেন।
বহুদিন সঠিক পরিচালনার অভাবে
মন্দিরটি প্রায় ভগ্নপ্রায় অবস্থায়
রয়েছে। তবু
দর্জিপাড়া অঞ্চলের মানুষেরা চাঁদা সংগ্রহ করে
এই মন্দির কিছুটা সংস্কার
করেন নতুন ভাবে এবং
মন্দিরের একপাশে শিববাহন "নন্দিশ্বর"
এবং অন্যপাশে রঘুকুলতিলক শ্রীরামচন্দ্রের পরমভক্ত হনুমানজীর মূর্তি স্থাপন করেন। উল্লেখ্য
আনুমানিক ২০০৬সালে এই মন্দিরে বিদেশী
গবেষকরা আসেন এবং মন্দিরের
যোগ্য পরিচালনার অভাব লক্ষ্য করেন। তারপরবর্তীকালে
সরকার থেকে উত্তর কলকাতার
প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থানরূপে এই শিবমন্দিরকে আখ্যায়িত
করেন। এইভাবে
নিষ্ঠার সাথেই আজও সেবা
পান উত্তর কলকাতার এই
দুই শিবমন্দিরের মহাদেব।
তথ্য লিপিবদ্ধেঃ শ্রীমান্ মৃণ্ময় চক্রবর্তী
চিত্রঋণঃ
শ্রীমান্ অমিত দে
No comments:
Post a Comment