Tuesday, April 9, 2019

ঐতিহ্যপূর্ণ সার্বভৌম ঠাকুরের সূচনায় মা অন্নপূর্ণার পূজা



ঐতিহ্যের ইতিহাসপর্বঃ 

 অন্নপূর্ণা পূজার ঐতিহ্যপর্ব- আজ প্রকাশিত হল ঐতিহ্যপূর্ণ সার্বভৌম ঠাকুরের সূচনায় মা অন্নপূর্ণার পূজার ইতিহাস বর্তমানে এই পূজা উত্তর কলকাতার আহিরিটোলার আনন্দ খাঁ লেনে প্রচলিত রয়েছে, এই প্রাচীন পূজার বর্তমানে শ্রীমান্ সায়ক রাজ(মাতুল বংশীয় পূজা) এর গৃহে অনুষ্ঠিত হয়
 "বনেদীর-বনেদীয়ানা" পরিবারের পক্ষথেকে শ্রীমান্ সায়ক রাজ মহাশয়কে অনেক ধন্যবাদ অভিনন্দন জানাই এই প্রাচীন পূজার ইতিহাসের সন্ধান দেবার জন্যবর্তমানে এই ঐতিহ্যপূর্ণ অন্নপূর্ণা পূজা মানিকতলার জগন্নাথ বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়
স্থান ফরিদপুর, অধুনা বাংলাদেশ আজ থেকে প্রায়, ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, সেখানে পৈতৃক নিবাসে ঠাকুরবাড়ি তে বসবাস করতেন পন্ডিত সার্বভৌম ঠাকুর। সার্বভৌম ঠাকুর ছিলেন তৎকালীন বারো ভুঁইয়ার অন্যতম, রাজা প্রতাপাদিত্যের গুরু। বলে রাখা দরকার, প্রতাপাদিত্যের অলৌকিক প্রাপ্তি, দেবী জশোরেশ্বরীর প্রতিষ্ঠা ও অভিষেক কার্য পৌরহিত্য করেন "সার্বভৌম ঠাকুর"। সার্বভৌম ঠাকুরের কুলদেবতা হচ্ছেন শ্রী গোবিন্দদেব। সার্বভৌম ঠাকুরের সমগ্র বিদ্যালাভ বারাণসী তে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তর্কজয় করার ফলে ওনাকে দিগ্বিজয়ী পন্ডিত উপাধি দেওয়া হয়। আনুমানিক ১৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে সার্বভৌম ঠাকুরের মনোবাঞ্ছা অনুযায়ী বাসন্তী পূজা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু কোন না কোন কারনে তিনি তিনি মৃন্ময়ী মূর্তি প্রস্তুতকারক কাউকে অনেক সন্ধান করেও পাচ্ছেন না, পেলেন যাকে, সেও মূর্তি গঠন করার বায়না নিয়েই পরলোক গমন করলেন, মূর্তি কিছুতেই শুরু হয় না! সার্বভৌম ঠাকুর পড়লেন ভীষণ দুশ্চিন্তায়। হঠাৎ একদিন রাতে, তিনি এক স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নে তাকে শুধু এইটুকু বলা হলো যে তিনি তার পূর্বকৃত প্রতিজ্ঞা বিস্মৃত হয়েছেন। সার্বভৌম ঠাকুর তখনই ধরপরিয়ে উঠে ভাবতে লাগলেন, হ্যাঁ সত্যি তো। বারাণসী তে দাঁড়িয়ে তিনি মানসিক সংকল্প করেছিলেন, তাঁর সংসার স্থিতিশীল হলে এবং তার পুত্রসন্তান হলে তিনি নিজগৃহে অন্নপূর্ণা পূজার প্রচলন করবেন। দুইই হয়েছে, কিন্তু তিনি প্রতিজ্ঞা বিস্মৃত হয়েছেন। সকালে উঠে তিনি স্নান সেরে গোবিন্দজীর পূজার উদ্যেশ্যে মন্দিরের দিকে যাবেন, এমন সময় এক শ্যমবর্ণ কিশোর বালক বয়স ১৬ হবে, এসে হঠাৎ তার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, "ঠাকুর - মূর্তি গড়ার লোক লাগবে শুনলাম, তা কি মূর্তি হবে, দশহাত, না কি দুহাত?" সার্বভৌম ঠাকুর থরথর করে কাঁপছেন, বঙ্গদেশের কোনো কুম্ভকারের পক্ষে তো অন্নপূর্ণা মূর্তির বিবরণ জানার কথা নয়! সার্বভৌম ঠাকুর বিস্মিত হয়ে তাঁকে মূর্তি গড়ার জন্য অনুরোধ করলেন! বালকটি মুর্তিগড়ার কাজ সম্পূর্ন করে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে, সার্বভৌম ঠাকুর অত্যন্ত বিচলিত হয়ে গেলেন। পরের দিন মন্দিরে ঢুকে দেখলেন গোবিন্দজীর অঙ্গে মাটির দাগ, সার্বভৌম ঠাকুর তার প্রাণ গোবিন্দ কে জড়িয়ে ধরে প্রেমশ্রুতে ভেসে গেলেন।

সার্বভৌম ঠাকুর পূজা শুরু করলেন গৃহে, নিয়ম করলেন যে সেই পূজা চলাকালীন গোবিন্দদেব সেখানে উপস্থিত থেকে সেই পূজা প্রত্যক্ষ করবেন, এবং মা কে ভোগ নিবেদনের  পূর্বে গোবিন্দদেব কে ভোগ নিবেদন করা হবে এবং তাঁর মূর্তি গড়ার পারিশ্রমিক রূপে তাঁকে দক্ষিণা দেওয়া হবে সেই নিয়ম আজও বর্তমান
পরবর্তী কালে এই পরিবার ক্রমান্বয়ে বৈদ্যবাটি পরে উত্তর কলকাতার আহিরিটোলার আনন্দ খাঁ লেনে এই পুজা প্রচলিত ছিল, আজ লোক বলের অভাবে আমার মাতুল বংশীয় এই পূজা আমার মায়ের আগ্রহে আমাদের গৃহে অনুষ্ঠিত হয়! গোবিন্দ দেব আছেন তবে প্রতিরূপ, আসল বিগ্রহ বৈদ্যবাটিতে থাকাকালীন চুরি হয়ে যায়, পরবর্তীতে তাঁর অনুকরণে এই সাম্প্রতিক বিগ্রহ স্থাপিত হয়!
মায়ের পূজার নিয়ম প্রচলিত পূজা পদ্ধতির থেকে একটু ভিন্ন প্রথমে হয় কাশীপুরস্থ প্রধান দেবতা গণের পূজা, যেমন ঢুঁড্ডি গণেশ, বিন্দুমাধব, বিশ্বেশর, সংকটা, দুর্গা, বিশালাক্ষী, শীতলা, বিন্ধবাসিনি, দন্ডপানি, সঙ্কটমোচন ইত্যাদির পূজা,পিঠপুজার সময় অবিমুক্ত কাশীক্ষেত্রের পূজা করা হয়, তার পরে ক্ষেত্র গ্রামদেবতার পূজা, তন্ত্রের প্রভাব এখানে কিছুটা হলেও কম পূজাপদ্ধতি যে বারাণসীর প্রভাব লক্ষণীয় নারায়নের সমস্ত পূজা হয় গোবিন্দজীর উপরে চালের নৈবেদ্য হয় না, ফল, কেবলমাত্র খিরের মিষ্টি, মেওয়া মাখন মিছড়ি দিয়ে সামান্য ভোগ অর্চনা হয়, দুপুরের ভোগ থাকে পঞ্চবিধ অন্ন অন্ন, ঘৃতান্ন, পুস্পান্ন, যুগলান্ন পরমান্ন, ব্যাঞ্জন ইত্যাদি নিয়ে কমপক্ষে ২১ পদ নিবেদন এখনো প্রচলিত, সেই সঙ্গে জগন্নাথ দেবের জন্য নিবেদন করা হয় বিশেষ কিছু পদ বিশেষ সুগন্ধি কস্তুরী কেশর মিশ্রিত তাম্বুল নিবেদন করা হয় বৈকালী প্রভাতীর সময় কর্পূর চন্দন মিশ্রিত বিশেষ শরবত নিবেদনের প্রথা প্রচলিত!
**শ্রীশ্রী জগন্নাথের ভোগের চিত্র**




**শ্রীশ্রী জগন্নাথের ভোগের চিত্র** 
পূজার পরের দিন গোবিন্দজীর জগন্নাথ দেবের রামরূপে অভিষেক শৃঙ্গার করা হয় এবং বিশেষ ভোগরাগ হয়
বিসর্জনের আগে গোবিন্দজীকে কিছুক্ষনের জন্য মায়ের কোলে বসিয়ে তারপর তাকে ঠাকুরঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়!
কৃতজ্ঞতাস্বীকার-শ্রীমান্ সায়ক রাজ
****ধন্যবাদ শ্রীমান্ সায়ক রাজ মহাশয়কে, তিনি বনেদীয়ানা পরিবারের সকল সদস্যকেই আমন্ত্রনপত্র পাঠিয়েছেন, এই ঐতিহাসিক পূজার সাক্ষী থাকার জন্য।****







No comments:

Post a Comment