ঐতিহ্যের
ইতিহাসপর্বঃ
অন্নপূর্ণা পুজোর পর্ব চলছে
আমাদের বনেদীয়ানার সমস্ত পেজ, ব্লগ
এবং বহু পরিচিত ওয়েবসাইটে
যাদের সাথে বনেদীয়ানার সংগঠন
যুক্ত। আবারও
অন্নপূর্ণা পুজোরই ইতিহাস উঠে
এলো, এবার তারকেশ্বর অঞ্চলের
চন্দ্র পরিবারের অন্নপূর্ণাপূজার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। পরিবারের
মৌখিক ইতিহাস বললেন শ্রীমান্
দীপমাল্য চন্দ্র এবং সেই
মৌখিক তথা পারিবারিক ইতিহাস
লিপিবদ্ধ করলেন শ্রীমান্ শুভদীপ।
এই হুগলির তারকেশ্বর চন্দ্র পরিবারের অন্নপূর্ণপূজা প্রথম শুরু হয়
১৯৬৬ সালে, পরিবারের পুর্বপুরুষ
শ্রী শঁরৎ চন্দ্র মহাশয়। তিনিই
এই পুজো শুরু করেন
চন্দ্রদের বাড়িতে। যা
আজও ৫৩বছর ধরে নিষ্ঠার
সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে।
চন্দ্র পরিবারের আদি
বাসস্থান বা বলা যেতে
পারে আদি বাড়ি উত্তর
কলকাতার আহিরিটোলায়। সেই
আদি বাড়িতে আজও আনুমানিক ২০০ বছর ধরে
অন্নপূর্ণা পুজো হয়ে আসছে।
১৯৫০ সাল নাগাদ
শঁরৎ চন্দ্রের পরিবার তারকেশ্বর অঞ্চলে
বসবাস শুরু করেন কিন্তু
অন্নপূর্ণার পুজো তাঁদের আদি
বাসস্থান আহিরিটোলাতেই অনুষ্ঠিত হত। শঁরৎ চন্দ্রের স্ত্রী
শ্রীমতী সঁখী সোনা চন্দ্রদেবী
মাঝে মাঝেই তাদের গৃহে
তিনি নূপুরের শব্দ শুনতে পেতেন। তারপর
তিনি তাঁর স্বামীকে সমস্ত
কথাই বলেন এবং সেই
বছর থেকেই শ্রী শঁরৎ
চন্দ্র তাঁর তারকেশ্বরের বাড়িতে
মা অন্নপূর্ণার পুজো শুরু করেন।
চন্দ্র বাড়ির প্রতিমা
অতীতে কলকাতার কুমোরটুলি থেকেই আসত, কিন্তু
একবার দুর্যোগের কারণে প্রতিমায় ক্ষতি
হওয়ায় তারপর থেকে তারকেশ্বর
অঞ্চলের স্থানীয় মৃৎশিল্পীকে দিয়েই প্রতিমা তৈরী
করানো হয়। আগে
সেই শিল্পী চন্দ্রদের বাড়িতে
এসে প্রতিমা তৈরী করতেন কিন্তু
বর্তমানে শিল্পীর বাড়িতেই তৈরী হয় মায়ের
মৃন্ময়ীরূপ।
চন্দ্র পরিবারের পুজো
শাক্তমতে হয়। অষ্টমী
তিথিতেই মূল পুজো হয়। দেবী
অন্নপূর্ণার মৃন্ময়ী বিগ্রহের ডানদিকে বাড়ির কুলদেবী লক্ষ্মীকে
বসানো হয়। আগে
চন্দ্রবাড়ির উঠোনে পুজো হত
বর্তমানে বাড়ির মন্দিরেই পূজা
হয় দেবীর। চন্দ্র
পরিবারে দেবীকে অন্নভোগ দেওয়ার
নিয়ম না থাকায় নানান
রকমের মিষ্টান্ন, দই, রাবড়ি ইত্যাদি
ভোগই প্রদান করা হয়।
আগে এই পুজোর
জন্য ভিয়েন বসত চন্দ্র
বাড়িতে তারজন্য হালুইকর এসে মিষ্টান্ন প্রস্তুত
করত কিন্তু কালের বিবর্তনে
সেই প্রথা আজ বন্ধ। দেবীকে
এখানে সমস্ত ধরনের গয়নাই
পড়ানো হয়। যেমন-
সোনার মুকুট, সোনার চুর,
সোনার হার, সোনার চিক
ইত্যাদি নানান অলংকারে সাজানো
হয়।
চন্দ্র বাড়িতে ধুনো
পোড়ানোর রীতি রয়েছে এবং
তারসাথে পুজোর দিন হোম,
১০৮দীপ প্রজ্জ্বলন ইত্যাদি নানান রীতি রয়েছে
এই পরিবারে। রামনবমীর
দিন কনকাঞ্জলি প্রথা ও রয়েছে
বিসর্জনের আগে। বিসর্জন
পর্বে বাড়ির মহিলারা সিঁদুর
খেলায় মেতে ওঠেন এবং
বরণের মধ্য দিয়ে মাকে
বিদায় জানান এই পরিবারের
সদস্যারা।
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ
শ্রীমতী সাবিত্রী দে এবং শ্রী
শ্যামল চন্দ্র (শঁরৎ চন্দ্রের কনিষ্ঠ
কন্যা এবং পঞ্চমপুত্র) এবং
দীপমাল্য চন্দ্র
তথ্যসূত্র
সংগ্রহেঃ শ্রীমান্ শুভদীপ রায় চৌধুরী
No comments:
Post a Comment